উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২৭টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ঋণ ও বাণিজ্য চুক্তিসহ উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি রয়েছে।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
চুক্তি সই শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে তাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের এ সফরকে সম্পর্কের ‘নতুন যুগের সূচনা’ বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শি জিনপিং বলেন, ‘আমরা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের জায়গা থেকে কৌশলগত সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি।’
চীন বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চেলের ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ বলে মনে করে বলে জানান শি জিনপিং।
চীনের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পারস্পারিক রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত। দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ককে আমরা আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই।’
শি জিনপিং বেলা ৩টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল কক্ষে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন দুই নেতা।
পরে চামেলি কক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পর হয় চুক্তি সই অনুষ্ঠান।
প্রসঙ্গত, ‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতি ধরে এগিয়ে যাওয়া চীনের সহযোগিতা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে শি জিনপিংয়ের এই ঢাকা সফর। ১৯৮৬ সালে লিশিয়ানইয়ানের পর বাংলাদেশে আসা প্রথম চীনা রাষ্ট্রপ্রধান তিনি।
১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা এসেছেন শি জিনপিং। যে দলে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তি সইয়ের পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হোটেল লা মেরিডিয়ানে বৈঠক করেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদ ও শি জিনপিং। সফররত প্রেসিডেন্টের সম্মানে নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে সাভারে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এর পরপরই ঢাকা ছেড়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
একটি বিশেষ বিমানে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশে আসেন শি জিনপিং। তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের আকাশসীমায় ঢোকার পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কয়েকটি বিমান পাহারা দিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে।
বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে শি জিনপিংকে বহনকারী বিশেষ বিমান হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দুপুর ১২টা ৩ মিনিটে তিনি বিমান থেকে বের হয়ে আসেন।
বিমানের সিঁড়িতে পা দিয়েই তিনি অপেক্ষমাণদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। যেখানে আগে থেকেই শি জিনপিংকে বরণ করে নিতে অপেক্ষা করছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
সিঁড়ি থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট নামার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শিশু। এরপর দুই দেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান একে অপরের সঙ্গে করমর্দন ও কুশল বিনিময় করেন। সেখানে সামরিক বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল চীনের প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার দেয়।
পাঠকের মতামত